Tuesday, May 18, 2021

String Theory ||Part-5 ||Science

অবশেষে হাজির হল স্ট্রিং থিওরি। এই থিওরি হল পদার্থবিজ্ঞানের একটি তাত্ত্বিক কাঠামো, যেখানে মৌলিক কনিকাদের ব্যাপারে কিছু ভিন্ন ধারনা পেষণ করা হয়। কনাপদার্থবিদ্যার মতে মৌলিক কনিকারা হল মাত্রাহীন বিন্দুর মত। ঠিক যেমনটি জ্যামিতিতে শেখানো হয়েছিল , “যার দৈর্ঘ্য প্রস্থ ও উচ্চতা নেই তাকেই বিন্দু বলে”। যে কনার দৈর্ঘ্য,প্রস্থ ও উচ্চতা নেই , আসলে তার কোন মাত্রাও নেই(এই দৈর্ঘ্য,প্রস্থ ও উচ্চতাই হোল স্থানের তিনটি মাত্রা )। আর কণাপদার্থবিদ্যার মতে মৌলিক কনিকারা হোল এইরকম মাত্রাহীন বিন্দুদের মত। আর স্ট্রিং থিওরির পার্থক্যটা এখানেই। স্ট্রিং থিওরি বলছে মৌলিক কনিকারা মাত্রাহীন বিন্দুর মত নয়, বরং এগুলো হল একমাত্রিক তারের মত । একটি তারের যেমন শুধু দৈর্ঘ্য আছে ঠিক তেমনি। আর ঠিক এই কারনেই তত্ত্বের নামও হয়েছে স্ট্রিং থিওরি বা তার-তত্ত্ব। এই তত্ত্বের লক্ষ্য হোল, এই স্ট্রিংগুলোর কোয়ান্টাম অবস্থা ও বৈশিষ্ট্য ব্যাবহার করে প্রকৃতিতে বিদ্যমান সকল মৌলিক কনিকার আচরণ ব্যাখ্যা করা। কনাপদার্থবিদ্যার স্ট্যান্ডার্ড মডেল যেসব কনিকাদের নিয়ে কাজ করে, স্ট্রিং থিওরি স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই এসব কনার সাথে মহাকর্ষের সম্পর্ক ব্যাখ্যা করতে পারে আর তাই এটি নিজেকে আজকাল সবকিছুর তত্ত্ব সিহেবে দাবী করতে পারছে। এই তত্ত্বের নিজস্ব গানিতিক মডেলের সাহায্যে এটি প্রকৃতিতে বিদ্যমান চারটি মৌলিক বল, সকল প্রকার শক্তি ও পদার্থের যেকোনো অবস্থাকে ব্যাখ্যা করতে পারে। এই তত্ত্বের অনুকল্পগুলো (হাইপোথিসিস) আজকাল কণাবাপদার্থবিজ্ঞানের ব্যাবহার করা হচ্ছে।সত্যি কথা বলতে, স্ট্রিং থিওরির ধারনাগুলো আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার এবং কোয়ান্টাম ফিল্ড থিওরি ও কোয়ান্টাম গ্রাভিটির (মহাকর্ষের কোয়ান্টাম রুপ) সকল ধোঁয়াশা দূর করে আমাদের নতুন এক পদার্থবিদ্যা উপহার দিয়েছে। মৌলিক কনাগুলোকে তাদের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী মুলত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। এক শ্রেনির নাম বোসন আরেক শ্রেনির নাম ফার্মিয়ন। প্রথম দিকে যে স্ট্রিং থিওরি গঠন করা হয় তাকে বলা হত বোসনিক স্ট্রিং থিওরি। গোঁড়ার দিককার এই থিওরি শুধু বোসন নিয়েই আলোচনা করত। পড়ে পদার্থবিদরা এই ভিন্ন ধরনের মৌলিক কনাদের মধ্যে এক ধরনের তাত্ত্বিক যোগাযোগ বের করেন। এই দুই ভিন্ন ধরনের কনিকাদের মধ্যে এই তাত্ত্বিক সাদৃশ্যের নাম দেওয়া হয় সুপারসিমেট্রি। পড়ে এই সুপারসিমেট্রির ধারনাকে স্ট্রিং থিওরিস্টরা তাদের তত্ত্ব গঠনে ব্যাবহার করেন। এই নতুন গঠন করা স্ট্রিং থিওরির নাম দেওয়া হয় সুপারস্ট্রিং থিওরি। এখন আর বিজ্ঞানীদের শুধু বোসন নিয়ে পড়ে থাকতে হচ্ছে না। স্ট্রিং থিওরি এখন বোসন ও ফার্মিওন দুই শ্রেনির কনিকাদের আচরণ নিয়েই কাজ করতে পারছে। কিন্তু সুপারস্ট্রিং থিয়োরির জন্য গনিত গঠন করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা দেখলেন তাদের কতগুলো অতিরিক্ত মাত্রার দরকার হচ্ছে। আমাদের স্থানের মাত্র তিনটি মাত্রাকে দেখতে পারি, কিন্তু পদার্থবিদরা দেখলেন এই তত্ত্বের গানিতিক ভিত্তির গঠন করতে গেলে তাদেরকে আরও কয়েকটি অতিরিক্ত মাত্রা আছে বলে ধরে নিতে হচ্ছে। অন্যভাবে বললে বলা যায়, এই তত্ত্ব বলছে আমরা যদিও এই অতিরিক্ত মাত্রাগুলোকে দেখাতে পাচ্ছি না বা কোন পরীক্ষার দ্বারা এদের অস্তিত্ব প্রমাণ করতেও পারছি না, কিন্তু আমারদের স্ট্রিং থিয়োরির গনিত বলছে যে তারা আছে। এই তত্ত্বের মতে অরিরিক্ত স্থানিক মাত্রাগুলো স্থানের খুব সংকীর্ণ জায়গায় জরিয়ে-পেচিয়ে আছে, তাই আমরা তাদেরকে দেখতে পারছিনা। আগে সবল নিউক্লিয়ার বলের বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করার জন্য কোয়ান্টাম ক্রোমোডাইনামিক্সের সাহায্য নেওয়া হত। কিন্তু বিজ্ঞানীরা কিছু সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারছিলেন না। ফলে ১৯৬০ এর দশকের শেষের দিকে সবল নিউক্লিয়ার বলের কিছু বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করার জন্য তারা সম্পূর্ণ নতুন এক তত্ত্ব নিয়ে কাজ করতে থাকেন। এভাবেই স্ট্রিং থিওরির জন্ম। পরবর্তীতে বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন এটি নিউক্লিয়ার পদার্থবিদ্যার চাইতে বরং মহাকর্ষের কোয়ান্টাম তত্ত্ব গঠন করতেই বেশি সক্ষম।পাঁচটি স্ট্রিং থিওরি তৈরি হবার পর বিজ্ঞানীরা দেখলেন যে স্ট্রিং থিওরি কোন একক তত্ত্বের বদলে একটি একগুচ্ছ তত্ত্বের দিকে যাচ্ছে। এবং এক পর্যায়ে ১১ মাত্রা বিশিষ্ট একটি তত্ত্ব গঠন করা হয় যার নাম দেওয়া হয় এম-থিওরি বা এম-তত্ত্ব।অনেক তাত্ত্বিক পদার্থবিদ (বিশেষ করে স্টিফেন হকিং, এডওয়ার্ড উইটেন এবং জুয়ান ম্যালডাছিনা) মনে করেন স্ট্রিং থিওরি এমন একটি তত্ত্বের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, যা আমাদের দেখা প্রকৃতির সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারবে। তাদের এরকম মনে করার অবশ্য কারন ও আছে। স্ট্রিং থিওরির গানিতিক গানিতিক গঠনের সাহায্যে কোয়ান্টাম মেকানিক্স ও সাধারণ আপেক্ষিকতাকে একীভূত তত্তে রুপ দেওয়া যাবে। মানে আমরা মহাকর্ষের জন্য একটি কোয়ান্টাম ফিল্ড থিওরি পাব। ফলে প্রকৃতিতে বিদ্যমান চার প্রকার বলকে একীভূত করার কাজটি করা যাচ্ছে(বিজ্ঞানীরা এতদিন যা শত চেস্টা করেও করতে পারেন নি)। কোয়ান্টাম গ্রাভিটি আমাদের হলগ্রাফিক প্রিঞ্চিপাল, ব্ল্যাকহোল থার্মোডাইনামিক্স এর মত বেশ কিছু চমৎকার বিষয় সম্পর্কে তত্ত্ব গঠন করতে সহায়তা করছে। হকিং এর মতে, “এম-থিওরিই একমাত্র তত্ত্ব যেটি নিজেকে সবকিছুর তত্ত্ব বলে দাবী করতে পারে” । রির্চাড ফাইনম্যান, রজার পেনরোজ এবং শেলডন লি গ্লাসো এর মত কয়েকজন পদার্থবিজ্ঞানী অবশ্য এর সমালোচনা করেছেন।তাদের মতে এই তত্ত্ব পরীক্ষার জন্য প্রচুর শক্তির প্রয়োজন এবং তাই পরীক্ষা করে এই তত্ত্বের অনুমানগুলোর সত্যতা প্রমাণ করা সম্ভব না।তাই এই তত্ত্ব নিজেকে সবকিছুর তত্ত্ব হিসেবে দাবী করতে পারেনা।(এম-থিওরি নিয়ে দুই-চার লাইন কিছুটা নিচে আলোচনা করা হল। স্ট্রিং থিওরি শুরুটা ছিল একটি সাদামাটা ধারনা দিয়ে যে, আমরা মৌলিক কনিকাদের যেভাবে বিন্দু বা কনা হিসেবে ভেবে নেই তাদেরকে একটি চিকন এক মাত্রিক তার হিসেবেও ভাবা যেতে পারে।বাপারটা এরকম যে, আমরা যাদের গোল বিন্দু বলে ভাবছি তারা আসলে গোল নয়, আমাদের দৃষ্টির সীমাবদ্ধতার কারনে এদেরকে আমরা গোল হিসেবে দেখি। তাই যদি এদেরকে বহুগুনে বিবর্ধিত করা সম্ভব হয় (আসলে এতটা বিবর্ধিত করে দেখা প্রায় অসম্ভব) তাহলে আমরা এদেরকে একমাত্রিক লম্বা তার আকারেই দেখব। স্ট্রিং তত্ত্ব অনুসারে প্রকৃতিতে প্রাপ্ত সকল মৌলিক কনিকাই আসলে এ রকম তার। এসব তার আবার বিভিন্ন কম্পাঙ্কে কাঁপছে। এসব তারে ব্যাসার্ধ ও কম্পাংকের ভিন্নতার কারনে বিভিন্ন রকম বৈশিষ্ট্যের মৌলিক কনিকা হিসেবে দেখা দিচ্ছে। তারে কম্পনের পার্থক্যই এদের আধান, ভর নির্দিষ্ট করে দিচ্ছে। আর এসব তারের বলবিদ্যা বিশ্লেষণ করে অন্য বৈশিষ্ট্যগুলোও বের করা যাবে। সহজভাবে বললে গিটারের তারের কম্পাঙ্কের পার্থক্যের কারনে যেমন চিকন মোটা সুর বের হয় (ভিন্ন ভিন্ন নোড বাজে) তেমনি এসব স্ট্রিং এর কম্পনের পার্থক্যের কারনে বিভিন্ন বিশিষ্টের কনিকার দেখা মিলছে। স্ট্রিংগুলো পরস্পরের সাথে জোড়া লাগা বা আলাদা হবার কারনে কনা বা শক্তি নিঃসরণ অথবা শোষিত হতে পারে।

No comments:

Post a Comment

Dhaka - The city of Dreams

Introduction: Dhaka, the capital city of Bangladesh, has a rich and complex history. The city has been a center of political, economic, and...