Sunday, May 23, 2021

কোন কাজের পূর্বে বিসমিল্লাহ্ বলা যাবে আর কোন কাজের পূর্বে বলা যাবে না? ||ইসলাম

 প্রশ্ন: সকল প্রকার কাজের শুরুতে কি ‘বিসমিল্লাহ’ বলতে হয়? এমনকি হারাম কাজের শুরুতেও কি বিসমিল্লাহ বলা বৈধ?

উত্তর:
সকল প্রকার দুনিয়াবী বৈধ কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলতে হয়। হারাম বা মাকরূহ কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা হারাম বরং তা আল্লাহর সাথে ধৃষ্টতা প্রদর্শনের শামিল।
বিসমিল্লাহ বলার অর্থ উক্ত কাজে আল্লাহর সাহায্য ও বরকত কামনা করা। সুতরাং কেউ যদি আল্লাহর নিষিদ্ধ বা ঘৃণিত কাজে তার নিকট সাহায্য চায় বা বরকত কামনা করে তাহলে তা মহামহিম আল্লাহর সাথে বেয়াদবী করা হল না?
যেখানে হারাম কাজ করার আগে আল্লাহ তাআলার কথা স্বরণ করে সেখান থেকে দূরে সরে আসা আবশ্যক সেখানে বিসমিল্লাহ বলে হারাম কাজ করা কোনভাবেই বৈধ হতে পারে না।

🌀 কখন বিসমিল্লাহ্‌ বলা মুস্তাহাব?

🔸 ১) টয়লেটে প্রবেশের পূর্বে: بِسْمِ اللـهِ اللَّهُمَّ إنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الـخُبْثِ والـخَبَائِثِ তবে বিসমিল্লাহ ছাড়াও দুয়াটি বর্ণিত হয়েছে।
🔸২) ওযুর শুরুতে بِسْمِ اللهِ
🔸 ৩) খাওয়ার সময় بِسْمِ اللهِ
🔸 ৪) প্রাণী যবেহ্‌ করার সময়: بِسْمِ اللَّـهِ وَاللهُ أكْبرُ
(অনেক আলেমের মতে প্রাণী জবেহের সময় এই দুআ পড়া ওয়াজিব)
🔸 ৫) স্ত্রী সহবাসের সময়। ইবনু আব্বাস (রা:) থেকে বর্ণিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) বলেন:
لَوْ أَنَّ أَحَدَكُمْ إِذَا أَتَى أَهْلَهُ قَالَ بِاسْمِ اللَّهِ اللَّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَجَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا فَقُضِيَ بَيْنَهُمَا وَلَدٌ لَمْ يَضُرُّهُ
“তোমাদের কোন ব্যক্তি যদি স্ত্রী সহবাসের সময় এই দু’আ পাঠ করে:
بِسْمِ اللهِ اللهمَّ جَنِّبْناَ الشَّيْطاَنَ وَجَنِّبِ الشَّيْطاَنَ ماَ رَزَقْتَناَ
‘শুরু করছি আল্লাহর নামে, হে আল্লাহ্‌! আমাদেরকে শয়তান থেকে দূরে রাখ এবং আমাদেরকে যে সন্তান দান করবে তাকেও শয়তান থেকে দূরে রাখ।’ তবে তাদের জন্য যদি কোন সন্তান নির্ধারিত হয়ে থাকে, তাহলে শয়তান কখনই তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না।” (সহীহ বুখারী, অধ্যায়ঃ দু’আ, অনুচ্ছেদঃ স্ত্রী সহবাসের সময় যা বলতে হয়। হা/ ৫৯০৯। মুসলিম অধ্যায়ঃ বিবাহ অনুচ্ছেঃ সহবাসের সময় যা বলা মুস্তাহাব হা/ ২৫৯১)
🔸 ৬) নৌযানে আরহণের সময় بِسْمِ اللَّهِ مَجْرَاهَا وَمُرْسَاهَا ۚ إِنَّ رَبِّي لَغَفُورٌ رَّحِيمٌ (সূরা হূদ- ৪১)
🔸৭) পত্র লিখার সময় بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيمِ (সূরা নমল- ৩০)
🔸 ৮) রাস্তায় চলতে গিয়ে হঠাৎ পা পিছলে পড়ে গেলে বিসমিল্লাহ। যেমন এ মর্মে হাদীস বর্ণিত হয়েছে-
عَنْ أَبِي الْمَلِيحِ عَنْ رَجُلٍ قَالَ كُنْتُ رَدِيفَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَعَثَرَتْ دَابَّةٌ فَقُلْتُ تَعِسَ الشَّيْطَانُ فَقَالَ لَا تَقُلْ تَعِسَ الشَّيْطَانُ فَإِنَّكَ إِذَا قُلْتَ ذَلِكَ تَعَاظَمَ حَتَّى يَكُونَ مِثْلَ الْبَيْتِ وَيَقُولُ بِقُوَّتِي وَلَكِنْ قُلْ بِسْمِ اللَّهِ فَإِنَّكَ إِذَا قُلْتَ ذَلِكَ تَصَاغَرَ حَتَّى يَكُونَ مِثْلَ الذُّبَابِ.
আবূ মুলাইহ্‌ থেকে বর্ণিত, তিনি জনৈক ব্যক্তি (ছাহাবী) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন: আমি একদা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এর সাথে তাঁর আরোহীর পিছনে বসা ছিলাম। এমন সময় আরোহীটি পা ফসকে পড়ে গেল। তখন আমি বললাম, শয়তান ধ্বংস হোক। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বললেন: “শয়তান ধ্বংস হোক এরূপ বলো না, কেননা এতে সে নিজেকে খুব বড় মনে করে এমনকি ঘরের মত হয়ে যায় এবং বলে আমার নিজ শক্তি দ্বারা একাজ করেছি; বরং এরূপ মূহুর্তে বলবে ‘বিসমিল্লাহ্‌’। এতে সে অতি ক্ষুদ্র হয়ে যায় এমনকি মাছি সদৃশ্য হয়ে যায়।” [ মুসনাদে আহমাদ হা/ ১৯৭৮২। আবু দাঊদ, অধ্যায়ঃ আদব-শিষ্টচার, অনুচ্ছেদঃ এরকম বলবে না আমার প্রাণ খবিস হয়ে গেছে। হা/ ৪৩৩০। শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেন, সহীহ তারগীব তারহীব হা/ ৩১২৯। সহীহ আবু দাউদ হা/ ৪৯৮২।)
🔸 ৯) সূরা তওবা ছাড়া যে কোন সূরা পড়ার শুরুতে بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيمِ
🔸১০) মসজিদে প্রবেশের সময় بسم اللهِ، وَالصَّلاةُ وَالسَّلامُ عَلَى رَسُولِ الله ، اللَّهُمَّ افْتَحْ لِي أبْوَابَ رَحْمَتِكَ
🔸 ১১) মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় بِسْمِ اللَّهِ وَالصَّلاةُ وَالسَّلامُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ، اللَّهُمَّ إنِّي أَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ، اللَّهُمَّ اعْصِمْنِي مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيم
🔸১২) এছাড়াও দুনিয়াবী যে কোন বৈধ কাজের শুরুতে।
আল্লাহু আলাম

উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার , সৌদি আরব

রক্ষক যখন ভক্ষক || সত্য ঘটনা অবলম্বনে ||

একজন ডাক্তার বাংলাদেশে প্রাইভেট হাসপাতালের চাকরি ছেড়ে লন্ডনে গিয়ে একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে সেলসম্যান হিসাবে যোগ দিলেন। স্টোরের মালিক জিজ্ঞেস করলেন- তোমার কোনো অভিজ্ঞতা আছে ? তিনি জানালেন- আমি দেশে একজন ডাক্তার হিসেবে পরিচিত ছিলাম। চাকরির প্রথম দিনে তিনি খুব মনোযোগ দিয়ে কাজ করলেন। সন্ধ্যে ছ’টায় ছুটির সময় বস তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন- আজ তুমি ক’জন ক্রেতার কাছে পণ্য বিক্রি করেছ ? তিনি উত্তর দিলেন- আমি আজ সারাদিনে একজন ক্রেতার কাছে বিক্রি করেছি। মালিক আশ্চর্য হয়ে বললেন- মাত্র একজন? এখানকার প্রত্যেক সেলসম্যান দিনে ২০ থেকে ৩০ জন ক্রেতার কাছে পণ্য বিক্রি করে। তা তুমি কত পাউন্ডের পণ্য বিক্রি করেছ? তিনি বললেন- ৯৮,৭৬,৫৪৩ পাউন্ড। বস অবাক হয়ে বললেন- কী! এটা তুমি কিভাবে করলে? তিনি বললেন- ওই ক্রেতার কাছে প্রথমে মাছ ধরার একটি ছোট্ট বড়শি বিক্রি করেছি । তারপর একটি বড় ও একটি মাঝারি বড়শি বিক্রি করলাম। এরপর একটি বড় ফিসিং রড আর কয়েকটি ফিসিং গিয়ার বিক্রি করলাম। তারপর আমি তাকে প্রশ্ন করলাম- আপনি কোথায় মাছ ধরবেন? তিনি বললেন- তিনি সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় মাছ ধরবেন। তখন আমি তাকে বললাম- তাহলে তো আপনার একটি নৌকার প্রয়োজন হবে। আমি তাকে নিচতলায় নৌকার ডিপার্টমেন্টে নিয়ে গেলাম। ভদ্রলোক সেখান থেকে কুড়ি ফুট দীর্ঘ দুই ইঞ্জিন-বিশিষ্ট নৌকা কিনলেন। এরপর আমি তাকে বললাম- এই নৌকাটি তো আপনার ভক্সওয়াগন গাড়িতে ধরবে না, একটা বড় গাড়ির প্রয়োজন! আমি ভদ্রলোককে অটোমোবাইল ডিপার্টমেন্টে নিয়ে গেলাম। আমার পরামর্শে তিনি নৌকাটি বহন করার উপযোগী একটি গাড়ি বুকিং দিলেন। তারপর আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম- মাছ ধরার সময় কোথায় থাকবেন? তিনি জানালেন- এ বিষয়ে কোনো পরিকল্পনা করেননি। আমি তাকে ক্যাম্পিং ডিপার্টমেন্টে নিয়ে গেলাম। তিনি আমার পরামর্শ মতো ছ’জন লোক ঘুমানোর উপযুক্ত একটি ক্যাম্প তাঁবু কিনলেন। সবশেষে আমি তাঁকে বোঝালাম- আপনি যখন এতোকিছু কিনেছেন, এখন কিছু খাবার ও পানীয় কিনে নেওয়া উচিত। ভদ্রলোক দু’শ’ পাউন্ড দিয়ে কিছু মুদি-দ্রব্য ও দু’ কেইস বিয়ার কিনলেন! এবারে স্টোরের মালিক একটু দমে গিয়ে বিস্ময়ের সঙ্গে বলে উঠলেন- যে লোকটা একটি বড়শি কিনতে এসেছিল, তুমি তাকে দিয়ে এতোকিছু কেনালে! ডাক্তার ভদ্রলোক বললেন- না স্যার, ওই ভদ্রলোক শুধুমাত্র মাথাব্যথার ওষুধ কিনতে এসেছিলেন। আমি তাঁকে বোঝালাম- মাছ ধরলে মাথাব্যথার উপশম হবে। স্টোরের মালিক এবারে জানতে চাইলেন- এর আগে তুমি কী কাজ করতে ? তিনি বললেন- আমি বাংলাদেশে একটি প্রাইভেট হাসপাতালের ডাক্তার ছিলাম। দরকার না হলেও তখন রোগীদেরকে নানা ধরনের প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা, ইকো, ইসিজি, সিটি স্ক্যান, এক্সরে, এম.আর.আই ইত্যাদি পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দিতাম। স্টোরের মালিক বললেন- তুমি এখন থেকে আমার চেয়ারেই বসবে আর আমি তোমার দেশে গিয়ে প্রাইভেট হাসপাতালে ট্রেনিং নিয়ে আসব.....😐....!!

Tuesday, May 18, 2021

String Theory ||Part-1 ||Science

গ্রিকদের সময় থেকেই দার্শনিকদের ধারণা ছিলো সকল পদার্থ, পরামানু (Atom) নামক অতিক্ষুদ্র, অবিভাজ্য কণা দ্বারা গঠিত। অর্থাৎ যেকোনো পদার্থকে ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে সর্বশেষ যে অবস্থা পাওয়া সম্ভব তাই পরমানু। কিন্তু বর্তমানে আমাদের ভাঙ্গার দৌড় পরমানু পর্যন্ত আটকে থেকে নেই। পরমানুকে ভেঙ্গে আমরা এর ভেতর থেকে বের করে এনেছি ইলেকট্রন, নিউক্লি (Nuclei)। শুধু তাই নয়, বিজ্ঞানীরা ইলেকট্রন, নিউক্লিকেও ভেঙ্গে ফেলতে সক্ষম হয়েছেন এবং আবিষ্কার করেছেন আরও অসংখ্য অতিপারমানবিক কণার(Subatomic Particle) অস্তিত্ব। কিন্তু আগেকার সময়ের বিজ্ঞানী এবং দার্শনিকরা পরমানুর মাধ্যমে যেকোনো ধরণের পদার্থ সৃষ্টি হবার যে সরল কাঠামো (Framework) বের করে ফেলেছিলেন, অতিপারমানবিক কণাগুলো আবিষ্কার করার পর সেটা করা প্রায় অসম্ভব এবং ঝামেলার কাজ হয়ে দাঁড়ালো। নিউট্রিনো, কোয়ার্ক, মেসন, লেপটনস, হার্ডডন্স, গ্লুওনস, ডব্লিও-বোসন ইত্যাদি ইত্যাদি উদ্ভট নামের এবং ধর্মের অতিপারমানিক কণারাই যে প্রকৃতির একেবারে মৌলিক পর্যায়ের অবস্থা সেটা মেনে নেওয়াটা কষ্টকরই বটে।পদার্থের গাঠনিক কাঠামো ব্যাখ্যা করার কষ্টসাধ্য এই বিষয়টাকে অতিচমৎকার ও সরলভাবে উপস্থাপন করা যায় স্ট্রিং তত্ত্ব (String theory) এবং এম তত্ত্ব (M-theory) দ্বারা। অতিপারমানবিক কণা দ্বারা সকল ধরণের পদার্থ সর্বোপরী মহাবিশ্ব সৃষ্টিকে আসলে তুলনা করা যায় ভায়োলিনের তার কিংবা ড্রামের মেমব্রেনের মাধ্যমে সুর সৃষ্টির সাথে। তবে মনে রাখা দরকার, এগুলো সাধারণ তার কিংবা মেমব্রেনের মতো নয়, এদের অস্তিত্ব দশ-এগারো মাত্রা পর্যন্ত বিস্তৃত। স্ট্রিং তত্ত্ব নিয়ে পরবর্তী part গুলোতে বিস্তারিত আলোচনা করার প্রচেষ্টা থাকবে।

String Theory ||Part -2 ||Science

আইনস্টাইন বেঁচে থাকতেই তার নামে অনেক মিথ(myth) প্রচলিত ছিল। বেশিরভাগ মানুষেরই ধারণা ছিল, তিনি মহাবিশ্ব সম্পর্কে এমন কিছু বুঝতে সক্ষম যা সাধারণ মানুষ কখনই বুঝতে পারবে না। তার আপেক্ষিক তত্ত্ব নিয়েও অনেক কল্পকাহিনী প্রচলিত ছিল। তবে এটিও সত্য যে, সে সময়ে তার “আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্ব” বোঝার মতো লোক খুব কমই ছিল। বিজ্ঞানী এডিংটন ছিলেন তার আপেক্ষিক তত্ত্বের একজন জোরালো সমর্থক। জনপ্রিয় বিজ্ঞান ও আপেক্ষিক তত্ত্বের বক্তৃতা দিয়ে ততদিনে তার বেশ সুনামও হয়ে গেছে। একদিন এডিংটনকে বলা হলো, “আপনি সহ মোট তিনজন ব্যক্তি আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব বুঝতে পারে”। একথা বলার পর এডিংটন কিছুক্ষণ কোনো কথা বললেন না। তখন সবার মনে হয়েছিল, এডিংটন বুঝি বিনয় দেখিয়ে চুপচাপ আছে। বিষয়টি বুঝতে পেরে এডিংটন বলল, “আসলে আমি ভেবে পাচ্ছিনা, তৃতীয় ব্যক্তিটি কে?”। এডিংটনের পরবর্তী সময়ের কারো মনে প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক, কেমন সেই তত্ত্ব, আইনস্টাইনের মতো লোকও যার সমাধান করতে চেয়ে সুবিধা করতে পারেননি! তিনি যে তত্ত্বের জন্য তার জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কাজ করে গেছেন তার নাম- ইউনিফাইড ফিল্ড থিওরি (Unified Field Theory) বা “সমন্বিত ক্ষেত্র তত্ত্ব”। তিনি এমন একটি তত্ত্ব গঠন করতে চেয়েছিলেন, যা প্রকৃতির জানা সকল বল ও ঘটনাকে ব্যাখ্যা করতে পারে; এমন একটি সমীকরণ, যা দিয়ে প্রকৃতির সবকিছু বর্ণনা করা যায়।এমনকি মৃত্যুর কিছু ঘণ্টা আগে পর্যন্ত আইন্সটাইন এই তত্ত্ব নিয়ে ভেবেছিলেন।

String Theory ||Part-3 ||Science

আইনস্টাইনের মৃত্যুর পরেও বিজ্ঞানীরা কিন্তু তাঁর এই চিন্তাকে তেমন একটা গুরুত্ব দেননি। সে সময়ের বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল, এমন কোনো তত্ত্বের খোঁজ করা সময় নষ্ট ছাড়া বেশি কিছু না। মূলত আইনস্টাইন ছিলেন তার সময়ের চেয়ে অনেক অগ্রগামী। তার সময়ের বিজ্ঞানীরা এমন একটি তত্ত্বের গুরুত্বই বুঝতে পারেনি। কিন্তু আইনস্টাইন মারা যাবার দশক দুয়েক পরেই বেশ কিছু বড়সড় পরিবর্তন আসে। ষাটের দশকের কাছাকাছি সময়ে উন্নত থেকে উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে পরমাণুর জগত ও মহাকাশের অনেক রহস্য উন্মোচিত হতে থাকে। এসময় তাদের প্রধান লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায় এমন একটি তত্ত্ব নির্মাণ করা, যা প্রকৃতির সবগুলো বলকে একীভূত করতে পারে। মূলধারার গবেষকরা বুঝতে পারেন প্রকৃতিতে যে চারটি মৌলিক বল আছে, তাদের একীভূত না করতে পারলে নতুন নতুন সমস্যার সমাধান করা সম্ভব না। আর প্রকৃতিকেও বোঝা সম্ভব না। আইনস্টাইনের স্বপ্নের “ইউনিফাইড ফিল্ড থিওরি” তখন বিজ্ঞানীদের বাস্তব প্রয়োজন হয়ে দাঁড়ায়। "ইউনিফাইড ফিল্ড থিওরি" ধারনাটির মূলত আবির্ভাব হয় একটি প্রধান কারণে । সেটা হল মহাবিশ্বের শিকড় বিশ্লেষণ । আর এর আবিষ্কারের প্রেক্ষাপট অনেক বড়,যে কারনে আমরা না হয় একটু সংক্ষেপেই আলোচনা করি। পদার্থবিদ্যার চারটি মৌলিক বলের কথা আমরা নিশ্চই জানি । সেগুলো হল : ১. মহাকর্ষ বল ২.সবল নিউক্লিয় বল ৩.দূর্বল নিউক্লিয় বল ৪.তড়িৎ চুম্বকীয় বল

String Theory ||Part-4 ||Science

এখন তাত্বিক পদার্থবিদ্যার মূল কাজ হল এই বল গুলোকে একীভূত করা বা এক সুতোয় গাথা । আইনস্টাইন এই কাজ শুরু করেছিলেন , কিন্তু শেষ করতে পারেন নি । পরবর্তীতে এসে গ্লাসো ,আব্দুস সালাম ও ভাইনবার্গ মিলে তড়িৎ চুম্বকীয় বল , আর দূর্বল নিউক্লিয় বলকে এক সুতোয় গাঁথতে সক্ষম হন । কিন্তু সবগুলোকে এক সুতোয় গাথা তখনও সম্ভব হয় নি । পরবর্তীতে কোয়ান্টাম তত্বের দ্বারা মহাকর্ষ বল বাদে অন্য সব বলকে এক সুতোয় গাথা সম্ভব হল ।আর এই মহাকর্ষবলকে এর সাথে গাথতে যে থিওরী আসল তা হল "আপেক্ষিকতার ব্যাপক তত্ত্ব" । কিন্তু বিরোধ দেখা দিল অন্য স্থানে । তখন কোয়ান্টাম তত্ত্ব ও আপেক্ষিকতার ব্যাপক তত্ত্ব নিয়ে গোল বাধল ।এদের পরস্পরের মধ্যে দেখা দিল বিরোধ । আপেক্ষিকতার ব্যাপক তত্ত্ব দিয়ে মহাবিশ্বের সবকিছুই ব্যাখ্যা করা যায় , আবার কোয়ান্টম থিওরী দিয়েও ব্যাখ্যা করা যায় । তবে , উভয়ের ক্ষেত্র ছিল আলাদা । যেমন , আপেক্ষিকতার ব্যাপক তত্ত্ব বৃহৎ স্থানে , যেমন : গ্রহ, তারকামন্ডল , নীহারিকার বিচলন এমনী মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ প্রভৃতি এর মাধ্যমে সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করা যেত । আবার কোয়ান্টাম থিওরী দিয়ে আনবিক ও পারমানবিক স্তরের বিভিন্ন তত্ত্ব সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করা যায় । এদের প্রত্যেকে নিজ নিজ ক্ষেত্রে সফল । কিন্তু ভাবছেন , তাহলে কেন এদের মধ্যে বিরোধ ? বিজ্ঞানীরা ভাবলেন , এইভাবে মহাবিশ্বের দুই রকম জগৎকে দুটি থিওরী দেয় ব্যাখ্যা করা যেন পদার্থবিজ্ঞানেরই ব্যার্থতা । যে সময় না পর্যন্ত এই দুই তত্ত্বকে এক সুতোয় গাথা যাচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত মহাবিশ্বের সবকিছু সঠিকভাবে আমাদের জানা সম্ভব হবে না । আর কিছু ক্ষেত্রে এই দুটি থিওরী দিয়ে কোন কিছু ব্যখ্যা করতে গেলে সমস্যার সৃষ্টি হয় । যেমনঃ ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহবরের ক্ষেত্রে । এ ক্ষেত্রে আপেক্ষিকতার তত্ত্ব অনুসারে আমরা জানি যে কৃষ্ণগহবরে বস্তুসমূহ অত্যান্ত ঘন সন্নিবিষ্ট হয়ে তার কেন্দ্রে একটি ক্ষুদ্র বিন্দুতে বিলীন হয় । এক্ষেত্রে আমরা দেখছি, কৃষ্ণগহবর একই সাথে অত্যান্ত উচ্চ ভর বিশিষ্ট ও অত্যান্ত ক্ষুদ্র আয়তনবিশিষ্ট একটা বস্তু । এখন , এই কৃষ্ণগহবর ব্যাখ্যা করতে আপেক্ষিকতার তত্ত্ব লাগছে বৃহৎ ভরের কারণে সৃষ্ট মহাকর্ষ কেন্দ্রকে সামলাতে , আবার কোয়ান্টাম তত্ত্ব প্রয়োজন পরে কৃষ্ণগহবরের অত্যান্ত ঘন সন্নিবিষ্ট ক্ষুদ্রায়তনের কারণ ব্যাখ্যার জন্য । আর এই দুই তত্ত্ব একসাথে প্রয়োগ করতে গিয়ে দেখা যায় যে এই বিশেষ অবস্থায় তারা ভেঙে পড়ে ।যেমন ভাবে কোন শক্ত মাটির দলাকে চাপ দিলে ভেঙে পড়ে তেমন ভাবেই । আবার সৃষ্টির একদম শুরুতেও(বিগ ব্যাং) আপেক্ষিকতার তত্ত্বের সমীকরণগুলো কাজ করে না(যেমন আলো পৌছার পূর্বেই মহাবিশ্ব প্রসারিত হয়েছিল)। শুরুটা ছিল একই সাথে একটি কোয়ান্টাম ঘটনা ও স্থান-কালের বক্রতার সৃষ্ট। সেই সময়টা ব্যাখ্যা করার জন্য আমাদের দুটি তত্ত্বকে একইসাথে প্রয়োগ করতে হবে। তাই বোঝাই যাচ্ছে মহাবিশ্ব সৃষ্টির রহস্য বুঝতে হলে একটি একীভূত তত্ত্বের কোনো বিকল্প নেই। কি করা যায় এখন!

String Theory ||Part-5 ||Science

অবশেষে হাজির হল স্ট্রিং থিওরি। এই থিওরি হল পদার্থবিজ্ঞানের একটি তাত্ত্বিক কাঠামো, যেখানে মৌলিক কনিকাদের ব্যাপারে কিছু ভিন্ন ধারনা পেষণ করা হয়। কনাপদার্থবিদ্যার মতে মৌলিক কনিকারা হল মাত্রাহীন বিন্দুর মত। ঠিক যেমনটি জ্যামিতিতে শেখানো হয়েছিল , “যার দৈর্ঘ্য প্রস্থ ও উচ্চতা নেই তাকেই বিন্দু বলে”। যে কনার দৈর্ঘ্য,প্রস্থ ও উচ্চতা নেই , আসলে তার কোন মাত্রাও নেই(এই দৈর্ঘ্য,প্রস্থ ও উচ্চতাই হোল স্থানের তিনটি মাত্রা )। আর কণাপদার্থবিদ্যার মতে মৌলিক কনিকারা হোল এইরকম মাত্রাহীন বিন্দুদের মত। আর স্ট্রিং থিওরির পার্থক্যটা এখানেই। স্ট্রিং থিওরি বলছে মৌলিক কনিকারা মাত্রাহীন বিন্দুর মত নয়, বরং এগুলো হল একমাত্রিক তারের মত । একটি তারের যেমন শুধু দৈর্ঘ্য আছে ঠিক তেমনি। আর ঠিক এই কারনেই তত্ত্বের নামও হয়েছে স্ট্রিং থিওরি বা তার-তত্ত্ব। এই তত্ত্বের লক্ষ্য হোল, এই স্ট্রিংগুলোর কোয়ান্টাম অবস্থা ও বৈশিষ্ট্য ব্যাবহার করে প্রকৃতিতে বিদ্যমান সকল মৌলিক কনিকার আচরণ ব্যাখ্যা করা। কনাপদার্থবিদ্যার স্ট্যান্ডার্ড মডেল যেসব কনিকাদের নিয়ে কাজ করে, স্ট্রিং থিওরি স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই এসব কনার সাথে মহাকর্ষের সম্পর্ক ব্যাখ্যা করতে পারে আর তাই এটি নিজেকে আজকাল সবকিছুর তত্ত্ব সিহেবে দাবী করতে পারছে। এই তত্ত্বের নিজস্ব গানিতিক মডেলের সাহায্যে এটি প্রকৃতিতে বিদ্যমান চারটি মৌলিক বল, সকল প্রকার শক্তি ও পদার্থের যেকোনো অবস্থাকে ব্যাখ্যা করতে পারে। এই তত্ত্বের অনুকল্পগুলো (হাইপোথিসিস) আজকাল কণাবাপদার্থবিজ্ঞানের ব্যাবহার করা হচ্ছে।সত্যি কথা বলতে, স্ট্রিং থিওরির ধারনাগুলো আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার এবং কোয়ান্টাম ফিল্ড থিওরি ও কোয়ান্টাম গ্রাভিটির (মহাকর্ষের কোয়ান্টাম রুপ) সকল ধোঁয়াশা দূর করে আমাদের নতুন এক পদার্থবিদ্যা উপহার দিয়েছে। মৌলিক কনাগুলোকে তাদের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী মুলত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। এক শ্রেনির নাম বোসন আরেক শ্রেনির নাম ফার্মিয়ন। প্রথম দিকে যে স্ট্রিং থিওরি গঠন করা হয় তাকে বলা হত বোসনিক স্ট্রিং থিওরি। গোঁড়ার দিককার এই থিওরি শুধু বোসন নিয়েই আলোচনা করত। পড়ে পদার্থবিদরা এই ভিন্ন ধরনের মৌলিক কনাদের মধ্যে এক ধরনের তাত্ত্বিক যোগাযোগ বের করেন। এই দুই ভিন্ন ধরনের কনিকাদের মধ্যে এই তাত্ত্বিক সাদৃশ্যের নাম দেওয়া হয় সুপারসিমেট্রি। পড়ে এই সুপারসিমেট্রির ধারনাকে স্ট্রিং থিওরিস্টরা তাদের তত্ত্ব গঠনে ব্যাবহার করেন। এই নতুন গঠন করা স্ট্রিং থিওরির নাম দেওয়া হয় সুপারস্ট্রিং থিওরি। এখন আর বিজ্ঞানীদের শুধু বোসন নিয়ে পড়ে থাকতে হচ্ছে না। স্ট্রিং থিওরি এখন বোসন ও ফার্মিওন দুই শ্রেনির কনিকাদের আচরণ নিয়েই কাজ করতে পারছে। কিন্তু সুপারস্ট্রিং থিয়োরির জন্য গনিত গঠন করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা দেখলেন তাদের কতগুলো অতিরিক্ত মাত্রার দরকার হচ্ছে। আমাদের স্থানের মাত্র তিনটি মাত্রাকে দেখতে পারি, কিন্তু পদার্থবিদরা দেখলেন এই তত্ত্বের গানিতিক ভিত্তির গঠন করতে গেলে তাদেরকে আরও কয়েকটি অতিরিক্ত মাত্রা আছে বলে ধরে নিতে হচ্ছে। অন্যভাবে বললে বলা যায়, এই তত্ত্ব বলছে আমরা যদিও এই অতিরিক্ত মাত্রাগুলোকে দেখাতে পাচ্ছি না বা কোন পরীক্ষার দ্বারা এদের অস্তিত্ব প্রমাণ করতেও পারছি না, কিন্তু আমারদের স্ট্রিং থিয়োরির গনিত বলছে যে তারা আছে। এই তত্ত্বের মতে অরিরিক্ত স্থানিক মাত্রাগুলো স্থানের খুব সংকীর্ণ জায়গায় জরিয়ে-পেচিয়ে আছে, তাই আমরা তাদেরকে দেখতে পারছিনা। আগে সবল নিউক্লিয়ার বলের বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করার জন্য কোয়ান্টাম ক্রোমোডাইনামিক্সের সাহায্য নেওয়া হত। কিন্তু বিজ্ঞানীরা কিছু সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারছিলেন না। ফলে ১৯৬০ এর দশকের শেষের দিকে সবল নিউক্লিয়ার বলের কিছু বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করার জন্য তারা সম্পূর্ণ নতুন এক তত্ত্ব নিয়ে কাজ করতে থাকেন। এভাবেই স্ট্রিং থিওরির জন্ম। পরবর্তীতে বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন এটি নিউক্লিয়ার পদার্থবিদ্যার চাইতে বরং মহাকর্ষের কোয়ান্টাম তত্ত্ব গঠন করতেই বেশি সক্ষম।পাঁচটি স্ট্রিং থিওরি তৈরি হবার পর বিজ্ঞানীরা দেখলেন যে স্ট্রিং থিওরি কোন একক তত্ত্বের বদলে একটি একগুচ্ছ তত্ত্বের দিকে যাচ্ছে। এবং এক পর্যায়ে ১১ মাত্রা বিশিষ্ট একটি তত্ত্ব গঠন করা হয় যার নাম দেওয়া হয় এম-থিওরি বা এম-তত্ত্ব।অনেক তাত্ত্বিক পদার্থবিদ (বিশেষ করে স্টিফেন হকিং, এডওয়ার্ড উইটেন এবং জুয়ান ম্যালডাছিনা) মনে করেন স্ট্রিং থিওরি এমন একটি তত্ত্বের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, যা আমাদের দেখা প্রকৃতির সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারবে। তাদের এরকম মনে করার অবশ্য কারন ও আছে। স্ট্রিং থিওরির গানিতিক গানিতিক গঠনের সাহায্যে কোয়ান্টাম মেকানিক্স ও সাধারণ আপেক্ষিকতাকে একীভূত তত্তে রুপ দেওয়া যাবে। মানে আমরা মহাকর্ষের জন্য একটি কোয়ান্টাম ফিল্ড থিওরি পাব। ফলে প্রকৃতিতে বিদ্যমান চার প্রকার বলকে একীভূত করার কাজটি করা যাচ্ছে(বিজ্ঞানীরা এতদিন যা শত চেস্টা করেও করতে পারেন নি)। কোয়ান্টাম গ্রাভিটি আমাদের হলগ্রাফিক প্রিঞ্চিপাল, ব্ল্যাকহোল থার্মোডাইনামিক্স এর মত বেশ কিছু চমৎকার বিষয় সম্পর্কে তত্ত্ব গঠন করতে সহায়তা করছে। হকিং এর মতে, “এম-থিওরিই একমাত্র তত্ত্ব যেটি নিজেকে সবকিছুর তত্ত্ব বলে দাবী করতে পারে” । রির্চাড ফাইনম্যান, রজার পেনরোজ এবং শেলডন লি গ্লাসো এর মত কয়েকজন পদার্থবিজ্ঞানী অবশ্য এর সমালোচনা করেছেন।তাদের মতে এই তত্ত্ব পরীক্ষার জন্য প্রচুর শক্তির প্রয়োজন এবং তাই পরীক্ষা করে এই তত্ত্বের অনুমানগুলোর সত্যতা প্রমাণ করা সম্ভব না।তাই এই তত্ত্ব নিজেকে সবকিছুর তত্ত্ব হিসেবে দাবী করতে পারেনা।(এম-থিওরি নিয়ে দুই-চার লাইন কিছুটা নিচে আলোচনা করা হল। স্ট্রিং থিওরি শুরুটা ছিল একটি সাদামাটা ধারনা দিয়ে যে, আমরা মৌলিক কনিকাদের যেভাবে বিন্দু বা কনা হিসেবে ভেবে নেই তাদেরকে একটি চিকন এক মাত্রিক তার হিসেবেও ভাবা যেতে পারে।বাপারটা এরকম যে, আমরা যাদের গোল বিন্দু বলে ভাবছি তারা আসলে গোল নয়, আমাদের দৃষ্টির সীমাবদ্ধতার কারনে এদেরকে আমরা গোল হিসেবে দেখি। তাই যদি এদেরকে বহুগুনে বিবর্ধিত করা সম্ভব হয় (আসলে এতটা বিবর্ধিত করে দেখা প্রায় অসম্ভব) তাহলে আমরা এদেরকে একমাত্রিক লম্বা তার আকারেই দেখব। স্ট্রিং তত্ত্ব অনুসারে প্রকৃতিতে প্রাপ্ত সকল মৌলিক কনিকাই আসলে এ রকম তার। এসব তার আবার বিভিন্ন কম্পাঙ্কে কাঁপছে। এসব তারে ব্যাসার্ধ ও কম্পাংকের ভিন্নতার কারনে বিভিন্ন রকম বৈশিষ্ট্যের মৌলিক কনিকা হিসেবে দেখা দিচ্ছে। তারে কম্পনের পার্থক্যই এদের আধান, ভর নির্দিষ্ট করে দিচ্ছে। আর এসব তারের বলবিদ্যা বিশ্লেষণ করে অন্য বৈশিষ্ট্যগুলোও বের করা যাবে। সহজভাবে বললে গিটারের তারের কম্পাঙ্কের পার্থক্যের কারনে যেমন চিকন মোটা সুর বের হয় (ভিন্ন ভিন্ন নোড বাজে) তেমনি এসব স্ট্রিং এর কম্পনের পার্থক্যের কারনে বিভিন্ন বিশিষ্টের কনিকার দেখা মিলছে। স্ট্রিংগুলো পরস্পরের সাথে জোড়া লাগা বা আলাদা হবার কারনে কনা বা শক্তি নিঃসরণ অথবা শোষিত হতে পারে।

String Theory ||Part -6 ||Science

এই যে বিভিন্ন ভাবে তারগুলো কাপতে পারে, সেরকমই এক ধরনের কম্পনের কারনে স্পিন-২ নামে ভরহীন এক ধরনের কনিকার সৃষ্টি হয়। স্পিন-২ টাইপের কনিকার সবচেয়ে ভাল উদাহরন হচ্ছে গ্রাভিটন নামের একটি কনিকা। গ্রাভিটনের মিথস্ক্রিয়ার সাহায্যে এক ধরনের বল কার্যকর হয় , যার বৈশিষ্ট্য হুবহু মহাকর্ষ বলের মত। যেহেতু স্ট্রিং থিওরি হল গানিতিক ভাবে গঠিত একটি কোয়ান্টাম মেকানিক্সের তত্ত্ব, তাই গ্রাভিটনের অস্তিত্ব এটাই বলছে যে এই তত্ত্ব কোয়ান্টাম গ্রাভিটির (মহাকর্ষের কোয়ান্টাম রুপ) তত্ত্ব।এই তারগুলো খোলা এবং বন্ধ দুই ধরনেরই হতে পারে।খোলা তারগুলোর দুই প্রান্ত একটি আরেকটির সাথে জোড়া না লেগে আলাদা আলাদা ভাবে থাকে, আর বন্ধ তারগুলোর দুই প্রান্ত পরস্পরের সাথে জোড়া লেগে লুপ গঠন করে। খোলা তারগুলোর চেয়ে বন্ধ তারগুলো কিছুটা ভিন্ন ভাবে আচরণ করে। আর এদের থেকে পাওয়া কনিকারাও ভিন্ন ধরনের। বন্ধ তারের এমন বৈশিষ্ট্য আছে যা গ্রাভিটন উৎপন্ন করে, অপরদিকে শুধুমাত্র খোলা তারগুলো ফোটনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ আচরণ করে। এখানে বলে রাখা ভাল, যেকোনো খোলা তারই তার দুই প্রান্ত পরস্পরের সাথে জোড়া লেগে লুপ তৈরি করেতে পারে, তাই সব স্ট্রিং থিওরিতেই বন্ধ তার আছে। যেহেতু সবগুলো স্ট্রিং থিওরিতেই বন্ধ তার আছে তাই সব স্ট্রিং থিওরিই গ্রাভিটিকে ব্যাখ্যা করতে পারে(যেহেতু বন্ধ তার গ্রাভিটন উতপন্ন করে, আর গ্রাভিটন সক্রিয় হবার মাধ্যমেই গ্রাভিটি বা মহাকর্ষ কার্যকর হয়)।

String Theory || Part -7 ||Science

প্রথমদিকের স্ট্রিং থিওরির নাম ছিল বোসনিক স্ট্রিং থিওরি।এটি শুধুমাত্র বোসন কনিকাদের নিয়েই গঠন করা হয়েছিল। স্ট্রিং থিওরির এই মডেলটি ছিল খুব নিম্ন শক্তির “কোয়ান্টাম গ্রভিটির” থিওরি।এটি ফোটনের মত “গেজ বোসন” কনিকার আচরণ ব্যাখ্যা করত। তবে এই মডেলের কিছু সমস্যাও ছিল। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণটি ছিল এর অস্থিতিশীলতা। এই মডেলের কিছু সমীকরণের ফলাফল ছিল ভয়াবহ, বিশেষ করে এর একটি ইঙ্গিত ছিল যে, এই তত্ত্বের গঠন অনুসারে স্থান-কাল ক্রমে ক্ষয়ে যেতে থাকবে এবং এক সময় নিজের উপর দুমরে মুচরে পড়বে। আর তত্ত্বের নাম থেকেই বোঝা যাচ্ছে, এই তত্ত্বের কনার বর্ণালীতে শুধু বোসনের কণিকাদেরই অস্তিত্ব আছে। এখানে বলা দরকার যে বোসন কনিকারা শুধু শক্তির কনিকা বলে পরিচিত মানে শুধু বিকিরন হিসেবে আছে, তাহলে পদার্থের কনিকাদের (ফার্মিয়ন) কি হবে ! পড়ে বিজ্ঞানীরা বোসন আর ফার্মিয়নের মধ্যে একটি যোগসূত্র আবিস্কার করেন যেটি সুপারসিমেট্রি নামে পরিচিত। সুপারসিমেট্রি ব্যাবহার করে বোসন আর ফার্মিয়ন দুই ধরনের কনিকাদের আচরণই ব্যাখ্যা করা যায়।সুপারসিমেট্রিও অতিরিক্ত মাত্রার ধারনা সংযুক্ত করে ১১ মাত্রার একগুচ্ছ তত্ত্ব তৈরি করা হোল। স্ট্রিং থিওরির এই গুচ্ছ তত্ত্বটি এম-থিওরি নামে পরিচিত। যেহেতু এই তত্ত্ব গ্রাভেটি সহ সকল মৌলিক বল ও এদের মিথস্ক্রিয়াকে ব্যাখ্যা করতে পারে, তাই বিজ্ঞানীদের ধারনা এটি আমাদের মহাবিশ্বকে সঠিকভাবে বর্ণনা করতে পারবে, এবং সবকিছুর তত্ত্ব হিসেবে প্রতিস্থিত হবে। স্ট্রিং থিওরির বর্তমান গবেষণার লক্ষ্য হল, স্ট্যান্ডার্ড মডেলের সাথে গুনগত মিল রেখে এটি এমন একটি তত্ত্ব গঠন করবে, যা ডার্ক ম্যাটার এর অস্তিত্ব ব্যাখ্যা করবে। পাশাপাশি মহাজাগতিক স্ফিতির(যেটি বিগ ব্যাংয়ের পড়ে ঘটেছিল) গ্রহণযোগ্য সমাধান সহ একটি ছোট মহাকাশীয় ধ্রুবক খুজে বের করবে । তবে এটা এখনো জানা যায়নি স্ট্রিং থিওরির এমন কোন সমাধান আছে কিনা বা এসব করার জন্য এই তত্ত্বের কতটুকু স্বাধীনতা আছে। স্ট্রিং থিওরির চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে একটি হল এর পরিপূর্ণ রুপটি মহাবিশ্বের সকল অবস্থার ব্যাখ্যা একসাথে করতে পারে না। তার বদলে এর প্রত্যেকটি অংশ তত্ত্বগুলো ভিন্ন ভিন্ন ভৌত অবস্থার বর্ণনা করে।মানে প্রত্যেক অবস্থার জন্য এর আলাদা তত্ত্ব রয়েছে, আর সবগুলো মিলে একটি গুচ্ছ তত্ত্ব রয়েছে। বিক্ষিপ্ত স্ট্রিংগুলোকে পারটারবেশন থিওরি সুস্পষ্ট ভাবে সংজ্ঞায়িত করলেও এটি সাধারণ ভাবে এখনো পরিস্কার না যে স্ট্রিংগুলো কিভাবে অস্থিতিশীল অবস্থায় আছে।এছাড়া এটিও এখনো ভালমতো পরিস্কার না যে এই তত্ত্ব কিভাবে শুন্যাবস্থাকে নির্দিষ্ট করে আর স্থান-কালকে সংজ্ঞায়িত করে , যার সাহায্যে আমাদের পরিচিত মহাবিশ্বের গুণাবলি নির্ধারণ করা যায়(কারন আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্ব অনুসারে আমরা জানি আমাদের মহাবিশ্ব হল স্থান-কালের একটি বক্রতল, আর এর সাহায্যেই আমরা আমাদের মহাবিশ্বের ব্যাখ্যা করি)। আসলে এই থিওরী এখনও পর্যন্ত শুধু অংক কষে প্রমাণ করা সম্ভব হয়েছ । এর বাস্তব প্রমাণ হাজির করা সম্ভব হয় নি । কারণ এই এত ক্ষুদ্র স্ট্রিং কে দেখতে হলে আমাদের প্রযুক্তি অনেক উন্নত হতে হবে।

Monday, May 17, 2021

ঈদের খুশি

 -তাসনিয়া অন্তি

আগামীকাল শ্বশুরবাড়িতে আমার প্রথম ঈদ উদযাপন হতে যাচ্ছে।

এখন ঈদের আগের দিনের রাত, ইফতারি কোনো রকম শেষ করেই বাড়ির সবাই চাঁদ দেখতে গিয়েছে ছাদে। আমার ছোট ননদ আমাকে কয়েকবার ডাকলো কিন্তু সব কিছু এলোমেলো যার কারণে আমি তাদের সাথে যোগদান করতে পারিনি। আমি আর বুয়া মিলে সব কাজ গুছিয়ে নিচ্ছি।
মাত্র একটা বছর আগে ঠিক এই দিনেই কোনো রকম একটু শরবত মুখে দিয়েই আমিও আমার কাজিনদের সাথে ছাদে গিয়ে চাঁদ দেখেছি। অজস্র তারাবাজি, কালিপটকা, আতশ বোমা ফুটিয়েছি। কিন্তু এই মাত্র একটা বছরের ব্যাবধানে আমিও আমার মায়ের মতো সংসারের কাজে লেগে গিয়েছি। ভাবতেও অবাক লাগে এই আমার ননদ সেও একদিন আমার মতো এই জায়গায় দাঁড়িয়েই এইটাই ভাববে আবার আমার মেয়ে হলে সেও একদিন আমার জায়গায় দাঁড়িয়ে নিজের সংসারের কাজ করবে আর সবটা ভাববে হয়তো তার চোখে পানি এসে যেতে পারে আবার নাও আসতে পারে।

- বউমা?
- "জি মা। কিছু বলবেন?" পেছন থেকে ডাক দিলেন আমার শাশুড়ি মা।
- হ্যাঁ মা। তুমি একটু হাতের কাজ গুছিয়ে নিধি( আমার ননদ) আর ওর কিছু বান্ধবী আসবে। ওদের সবাইকে একটু মেহেদী লাগিয়ে দিও মা। তুমি নাকি খুব সুন্দর মেহেদী লাগাতে পারো। আমার মেয়েটা খুব লাজুক তো, তাই তোমাকে বলতে লজ্জা পাচ্ছে।
- আরে মা লজ্জার কী আছে? নিধি সরাসরি আমাকেই বলবে। এইখানে লজ্জার কী আছে, দাড়ান মা ও আগে আসুক।

বলা বাহুল্য আমার শাশুড়ী মা অনেক ভালো মানুষ, শুধু সে নয় এই পরিবারের সকলেই অনেক ভালো, আমাকে অনেক ভালো বেসেছে। তারপরেও একসাথে থাকতে গেলে অনেক ধরনের মনোমালিন্য হয়ে থাকে, আমার মায়ের কড়া নিষেধ এইসব নিয়ে মুখ গোমড়া না করতে আর আমার স্বামীকে বা আমার মায়ের কাছেই কখনও নালিশ না করতে। আমি সেইটাই করি, কী দরকার!। তারাই এখন আমার পরিবার, আমার আপন লোক।

হাতের কাজ গুছিয়ে রাতের রান্না করে আবার ঈদের দিন সকালে যেগুলো মা রান্না করবেন, সেসব টুকটাক গুছিয়ে বসে পড়লাম মেহেদী দিতে। নতুন বউয়ের হাতের সুনিপুণ মেহেদী লাগানো দেখতে পাশের বাড়ির আমার চাচী শাশুড়ীরাও এসে হাজির। কেউ ডিরেকশন দিতে লাগলো, এমন না অমন হলে আরো ভালো হবে। একটু সিম্পল বা আরো একটু গর্জিয়াস। সবটাই আমার গ্রহণ করতে হচ্ছে মুখের কোণে এক চিমটি হাসি মাখিয়ে।

এই আমি বিয়ের আগে কেউ আমার কোনো কাজে খুঁত ধরতে এলে বা বেশি জ্ঞান দিতে এলে মুখের উপর বলে দিতাম তাহলে আপনি/তুমি করুন। এত ভালো পারেন। কিন্তু সেই উপক্রম আপাতত আমার নেই, অনেকটা ধৈর্য এসে গিয়েছে মনের উপর।

" সংসার জীবনটাই হয়তো এমন। ধৈর্যের কাছে হেরে গেলেই আপনি তীব্র গতিতে সংসারের কাছে হেরে যাবেন।"

একটানা আটজনকে মেহেদী পরিয়ে আমি আপাতত বিধ্বস্ত। হাতের অবস্থা কাহিল, তখন আমি দেখলাম আমার শাশুড়ী মা খুবই কৌতূহল দৃষ্টিতে আমার ননদের হাতের দিকে তাকিয়ে বলছে,
-" বাহ্! কি সুন্দর করে মেহেদী দিয়েছে তোর ভাবি! খুবই সুন্দর লাগছে।"

তার কথা শেষ হতে না হতেই আমি এগিয়ে গেলাম তার কছে,
-" মা? আসুন আপনাকে দিয়ে দেই।"
-আরে না। আমি বুড়ো মানুষ এইসব নিবো না। তুমি নাও মা।
-না মা আমি পরে নিবো। আসুন আপনাকে দিয়ে দেই।

আমার শাশুড়ি আর কথা বললেন না। খুবই উৎফুল্ল মনে হাত এগিয়ে দিলেন আমার দিকে। মনের মাধুরী মিশিয়ে তাকে মেহেদী লাগিয়ে দিলাম।

কিছুক্ষণ বাদেই নাজিফ ( আমার স্বামী ) বাসায় এলো। সবার হাতে মেহেদী দেখে সে খুবই খুশি হলো, বেশি খুশি হলো তার মায়ের দিকে তাকিয়ে। সবাইকে খুশি দেখে আমারও অনেক ভালো লাগলো। তাকে খাবার দিয়ে, আরো কিছু কাজ গুছিয়ে, সকালের জন্য দুই প্রকার মিষ্টি রান্না করে অবশেষে আমি আমার রুমে এলাম। নাফিজ টিভি দেখছে,
- " কী ব্যাপার ব্যস্ত বউ? ঘরে স্বামী আছে খেয়াল আছে আপনার? "
- খেয়াল আছে বলেই তো এইখানে আমি মিস্টার।
- অত কথা ছাড়ো। তোমার হাতে মেহেদী কোথায়? এক্ষুনি লাগাও। তুমি তো জানো আমি মেহেদী কতো পছন্দ করি। দুহাতে মেহেদী না থাকলে আমার বউটাকে একটুও মানায় না। আর তুমি এমনিতেই মেহেদী কতো পছন্দ করো।
- কাহিল কণ্ঠে আমি বললাম, 'আমার এনার্জি নেই, প্রিয়।কালকে দুপুর পর লাগাবো।"
- না না এক্ষুনি। না হলে তুমি নিয়ে এসো আমি লাগিয়ে দিচ্ছি তোমাকে। কথাটা বলতে বলতে নাফিজের মোবাইলে একটা কল আসলো।

-" হ্যালো? কী রে ব্যাটা? জানোস না আজকে আমাদের পার্টি আছে। বিয়ে কইরা তুমি খুব ভাবে আছো, তাই না? ভাবিরে দে, তারে একটু বলি তোকে যেনো কিছু সময়ের জন্য আমাদের হাতে একটু সমর্পণ করে।"

নাফিজ বিভিন্ন ভাবে তাদেরকে বলতে লাগলো সে যেতে পারবে না আজকে, একটু কাজ আছে। একটু আগেই বাসায় ফিরেছে। তাদের কথার এক পর্যায়ে আমি বললাম,
-" তুমি যাও। তারা তোমার বন্ধু, প্রতিবার মজা করেছো। এইবার না গেলে ওরা কী ভাববে।"
- এক গাল হেসে নাফিজ আমার কপালে একটা চুমু এঁকে দিয়ে বললো, " এত ভালো কেনো আমার পাগলীটা। আচ্ছা তুমি ঘুমিয়ে যেও না। আমি দ্রুতই চলে আসবো। তোমার হাতে মেহেদী দিয়ে দিবো। অবশ্যই অপেক্ষা করবে আমার জন্য।"
- নাফিজকে বিদায় জানিয়ে আমি আমার বিছানায় লুটিয়ে পড়লাম। নিজের ব্যবহৃত মোবাইলটা একটু চেকিং দিয়ে দেখলাম আমার আম্মু ফোন দিয়েছিল কিন্তু ব্যস্ততার ভিড়ে মায়ের ফোনটা ধরা হয়নি। আবার বান্ধবীদের এসএমএস দেখলাম। সবাই ঈদ মোবারক পাঠিয়েছে। অনলাইনে আসিনি কেনো সেইগুলোও বলেছে। তাদের এসএমএস গুলো পড়তে পড়তে মেসেঞ্জারে ঢোকার সময়টাও হলো না আমার। গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম!

রাতের বেলায় ক্লান্ত দেহটা সব সামাজিকতার উর্ধ্বে অবস্থান করে। তখন দুহাত ভরে মেহেদী নেওয়ার প্রবল ইচ্ছাটা নেহাত ছেলেখেলা ছাড়া আর কিছুই লাগে না।

প্রিয়তমা

প্রিয়তমা

 অফিসের একটা কাজে বেশ কয়েকদিনের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া গিয়েছিলাম।

যখন ট্রেনে করে বাসায় ফিরছিলাম তখন খেয়াল করি ট্রেনের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে একটা ২৪-২৫ বছরের ছেলে ফোনে কথা বলছে আর অনবরত একটার পর একটা সিগারেট টানছে।

ওর এইভাবে সিগারেট খাওয়া দেখে কেন জানি অনেক বছর পর আমার পুরোনো অভ্যাসটা জেগে উঠলো। ছেলেটার কাছে গিয়ে একটু লাজুক ভঙ্গিতে বললাম,
-- একটা সিগারেট হবে?
ছেলেটা আমার কথা শুনে কিছু না বলে পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেটটা বের করে একটা সিগারেট আমার দিকে বাড়িয়ে দিলো
আমি সিগারেটে আগুন ধরিয়ে নিকোটিনের ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে ছেলেটাকে প্রশ্ন করলাম,
-- কোন কারণে কি টেনশনে আছো?
ছেলেটা শুকনো হাসি হেসে বললো,
-" প্রথমবার মেয়ে নিয়ে পালাবো টেনশন তো একটু হবেই"

হঠাৎ এমন একটা কথা শুনে আমার একটু অবাক হওয়া উচিত ছিলো। কিন্তু আমি একটুও অবাক হলাম না বরং সিগারেটে একটা লম্বা টান দিয়ে বললাম,
-- মেয়ে কোথায়?
ছেলেটা বললো,
-"অর্পিতা, ময়মনসিংহ রেলস্টেশনে বসে অপেক্ষা করছে। আমি ময়মনসিংহ পৌছালে তারপর দুইজনে একসাথে রংপুরে আমার এক বন্ধুর কাছে চলে যাবো"

আমি হেসে ছেলেটাকে বললাম,
-তোমার অনেক সাহস আছে দেখছি। ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে সব মানুষ পালিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে না। কিন্তু এই সাহসটা যদি নিজের পরিবারের মানুষদের সামনে দেখাতে তাহলে কিন্তু আজ পালিয়ে যাওয়া লাগতো না

ছেলেটা তখন বললো,
-" আমাদের কারো পরিবার রাজি হচ্ছিলো না তাই পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি"

আমি তখন সিগারেটের বারতি অংশটা ফেলে দিয়ে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বললাম,
--আজ পালিয়ে বন্ধুর কাছে যাবে। বন্ধু তোমায় ৫দিন কিংবা বেশি হলে ১০দিনের দায়িত্ব নিবে। ১১দিনের মাথায় ঠিকিই তোমায় বলবে অন্য ব্যবস্থা করতে। দুজনে সাথে যা টাকা পয়সা নিয়ে যাবে তাতে বড়জোর ১৫-২০দিন বিভিন্ন হোটেলে থেকে আর খাওয়া দাওয়া করে খরচ করে ফেলবে। তারপর বন্ধু বান্ধবের থেকে চেয়ে অনুরোধ করে টাকা ধার করে আরো না হয় ১০ দিনের মতো থাকলে। তারপর কিন্তু তোমার সব পথ বন্ধ হয়ে যাবে। তখন ভালোবাসার মানুষটাকে সাথে নিয়ে না খেয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে হবে। আর তোমার ঠিক ঐ মুহুর্তে মনে হবে বাসা থেকে পালিয়ে অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি। বাবা মাকে আরেকটু বুঝালে হয়তো তারা রাজি হতো

আমার কথাগুলো ছেলেটা শুনে মাথা নিচু করে বললো,
-"তাহলে এখন কি করবো?"

আমি ছেলেটার কাঁধে হাত রেখে বললাম,
--তোমার পছন্দের মানুষটা শতভাগ পারফেক্ট হলেও তোমার পরিবারের লোকজন তার কিছু না কিছু দোষ খুঁজে বের করবে। ওরা নানা ভাবে বুঝাতে চেষ্টা করবে তোমার পছন্দের মানুষটার মাঝে অনেক ক্রুটি আছে। তখন তুমি হাল ছেড়ে না দিয়ে বরং তুমিও তোমার পরিবারের লোকদের বুঝানোর চেষ্টা করতে হবে তোমার জীবনে তোমার পছন্দের মানুষটা কতটা দরকার। তোমার জীবনে তাকে লাগবেই। তখন আবেগে কথা না বলে বুদ্ধিমানের মতো পয়েন্টে পয়েন্টে কথা বলতে হবে

তোমাকে আমার জীবনের একটা ঘটনা বলি,

আমার পরিবারের লোকজন যেদিন জানতে পারলো আমার নিজের পছন্দ করা মেয়ে আছে সেদিনের পর থেকেই সবাই আমার সাথে অন্য রকম ব্যবহার করা শুরু করলো। আমি বাবার চোখের সামনে পড়লেই বাবা অন্যদিকে চোখ সরিয়ে বলতো,
- " নিজে নিজে যেহেতু মেয়ে পছন্দ করে ফেলেছিস তা বিয়েটাও নিজে নিজে করে ফেললেই হয়। আমাদের জানানোর কি দরকার? "

মা আমাকে দেখলেই দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলতো,
-" আমার কি আর সেই ভাগ্য আছে, যে দশটা মেয়ে দেখে একটা মেয়েকে ছেলের বউ হিসাবে পছন্দ করবো। সেই কপাল তো আমার নাই। আমার ছেলে আগে থেকেই প্রেম করে বসে আছে"

আর আমার ভাবী আমাকে দেখলেই আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে কাজের মেয়েটাকে বলতো,
-" শোন, আর কয়েকদিন পর বাসায় রাতে লাইট জ্বালাতে হবে না। আমার দেবর এক হুরপরী পছন্দ করেছে। হুরপরীর রুপের ঝলকানিতে সারাঘর এমনিতেই আলোকিত থাকবে"

আমি তখনো কিন্তু কাউকে কিছুই বলি নি৷ শুধু দাঁতে দাঁত চেপে রেখে সহ্য করেছি সঠিক সময়ের জন্য

একদিন সকালে পরিবারের সবাই মিলে যখন নাস্তা করছিলাম তখন আমি সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলি,
-- তোমরা সবাই আগে আমার পছন্দ করা মেয়েটাকে গিয়ে দেখো। দেখার পর তোমাদের কারো যদি অপছন্দ হয় কিংবা তোমরা যদি মেয়ের কোন দোষ খুঁজে পাও তাহলে আমি কথা দিচ্ছি আমি এই মেয়েকে বিয়ে করবো না।

আমার কথা শুনে সবাই মেয়ে দেখতে যেতে রাখি হলো।
পরদিন আমার সাথে সবাই আমার পছন্দ করা মেয়েকে দেখতে যায়। সবাই দেখে আসার পর যখন আমি জানতে চাই মেয়ে পছন্দ হয়েছে কি না, তখন আমার ভাবী আমার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট বাকিয়ে বলেছিলো,
-" শুধু ফর্সা হলেই মেয়ে সুন্দর হয় না। চেহারার গঠনও সুন্দর হতে হয়। কলাগাছের মতো লম্বা মেয়ে আর পাটকাঠির মতো শরীর। আমার একটুও ভালো লাগে নি"

আমি ভাবীর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলেছিলাম,
--খুব জ্বলে তোমার তাই না? তোমায় যেন একটু লম্বা দেখায় সেজন্য তো ৩ ইঞ্চি উঁচু হাইহিল জুতা পরে সারাক্ষণ ঘুরে বেড়াও। আর একটু ফর্সা হওয়ার জন্য বাজার থেকে আনা ১৪০ টাকা কেজি দরের মুসুরের ডাল, ৫০টাকা কেজি দরের শশা আর ৪০টাকা কেজি দরের আলু সব মুখে ডলতে থাকো সারাদিন। আসলে যার যেটা নাই সেটা যদি সে অন্যের মাঝে খুঁজে পায় তাহলে একটু জ্বলবে এটাই তো স্বাভাবিক তাই না বলো? আর চেহারার দিক দিয়ে যদি বিবেচনা করো তাহলে আমার পছন্দ করা মেয়ের চেহারার মাঝে কিছুটা হলেও বাঙালি ভাব আছে। কিন্তু তোমায় চেহারা তো পুরাই চায়নাদের মতো। ভাইয়া তো আর এমনি এমনি তোমাকে উপজাতি বলে ডাকে না, কারণেই ডাকে

আমার কথা শুনে ছেলেটা হেসে বললো,
-" তারপর কি হলো ভাইয়া?"

তারপর আমি মা'র দিকে তাকিয়ে বললাম,
-- মা, তুমি তো ভাবীকে নিজে পছন্দ করে এনেছিলে। এখন তো দেখি সপ্তাহে ৭দিনের মধ্যে ৫দিনেই তোমরা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে বউ-শ্বাশুড়ি ঝগড়া করো। তুমি আমার জন্য যে মেয়েটা পছন্দ করবে সেও যে ভাবীর মতো তোমার সাথে ঝগড়া করবে না তার কি গ্যারান্টি আছে বলো? কিন্তু আমি তোমায় গ্যারান্টি দিচ্ছি আমার পছন্দ করা মেয়ে আমি বেঁচে থাকতে তোমার মুখের উপর কখনো কথা বলবে না

মা আমার কথা শুনে ঐ সময় একদম চুপ হয়ে গিয়েছিলো পাশে তাকিয়ে দেখলাম বাবা গোমড়া মুখে চুপচাপ বসে আছে। আমি বাবার কাছে গিয়ে বলেছিলাম,
-- বাবা, তুমি আমায় জন্ম দিয়েছো। সেই তোমাকে ছাড়া আমি একা কিভাবে বিয়ে করি বলো? বাবা মায়ের শতভাগ অধিকার আছে সন্তানকে নিজেদের পছন্দের পাত্র-পাত্রীর সাথে বিয়ে দেওয়ার। কিন্তু সন্তানের কি অধিকার নেই, যার সাথে সে সারাটা জীবন পার করবে তাকে নিজে পছন্দ করার?

আমার কথা শুনে বাবা আমার মাথায় হাত রেখে হাসি মুখে বলেছিলো,
-" অবশ্যই সন্তানের সে অধিকার আছে। মেয়ে আমার পছন্দ হয়েছে। আমি রাজি"

আমি কথাগুলো বলে যখন ছেলেটার দিকে তাকালাম তখন খেয়াল করি ছেলেটা চোখে পানি টলমল করছে। আমি তখন ওর হাতটা ধরে বলি,
--সবার অভিশাপ নিয়ে নতুন জীবনটা শুরু করো না বরং সবার আশীর্বাদ নিয়ে নতুন জীবনটা শুরু করো....
----
--------

রেলস্টেশনে বসে শ্রাবণী যখন ফেসবুকে সময় পার করছিলো তখন ওর সামনে ২১-২২ বছরের একটা মেয়ে এসে দাঁড়িয়ে ভয়ার্ত কন্ঠে বললো,
-"আপি, আপনার ফোনে একটু কথা বলা যাবে? আমার ফোনের ব্যালেন্স শেষ "

শ্রাবণী ফোনটা দিলে মেয়েটা একটু দূরে গিয়ে ফোনে কথা বলতে লাগল। কথা বলা শেষে মেয়েটা যখন শ্রাবণীকে ফোনটা দিলো তখন শ্রাবণী খেয়াল করলো মেয়েটা কাঁদছে
শ্রাবণী মেয়েটাকে প্রশ্ন করলো,
--কি হয়েছে তোমার?
মেয়েটা চোখের জল লুকানোর চেষ্টা করে বললো,
-"কিছু হয় নি আপি"
শ্রাবণী তখন বললো,
-- তুমি আমাকে তোমার নিজের বড় বোন ভাবতে পারো। বলো তোমার কি হয়েছে? আমার যদি ক্ষমতা থাকে আমি অবশ্যই তোমায় সাহায্য করবো

মেয়েটা তখন কাঁদতে কাঁদতে শ্রাবণীকে বললো,
-"আপি, আমি খালিদ নামের একটা ছেলেকে ভালোবাসি। কিন্তু আমাদের পরিবার রাজি হচ্ছিলো না। তাই আমি বাসা থেকে পালিয়ে ময়মনসিংহ এসেছি আর খালিদও বাসা থেকে পালিয়ে ময়মনসিংহ আসছে। তারপর আমরা দুইজনে অনেক দূরে কোথাও চলে যাবো। কিন্তু এখন বাবা মা'র জন্য খুব খারাপ লাগছে"

মেয়েটার কথা শুনে শ্রাবণী মেয়েটাকে বললো,
--পালিয়ে যাবার আগে আরেকটা বার ভেবে দেখো কাজটা ঠিক করছো কি না। তুমি পালিয়ে গেলে তোমাকে নিয়ে গলির মোড়ের চায়ের দোকানে সমালোচনা হবে। তোমার বাবাকে দেখে মানুষ আড়ালে-সামনে নানা রকম খারাপ মন্তব্য করবে। তুমি ভালো থাকার জন্য ভালোবাসার মানুষটাকে নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছো কিন্তু তারজন্য তোমার পরিবারকে সবার চোখে ছোট করে রেখে যাবে এটা তো ঠিক না

শ্রাবণীর কথা শুনে মেয়েটা তখন বললো,
-" তাহলে আমি কি করবো আপি"

শ্রাবণী তখন মেয়েটার হাত ধরে বললো,
--তোমার বাবা মা তোমায় জন্ম দিয়েছেন। ছোট থেকে বড় করেছেন। তাদেরও একটা ইচ্ছে আছে দেখে শুনে ভালো একটা ছেলের হাতে তোমাকে তুলে দেওয়ার। কিন্তু তুমি যদি হুট করে তাদের বলো তুমি অন্য একজনকে ভালোবাসো তখন তোমার পছন্দের ছেলেটা শত ভালো হলেও তাদের রাজি না হওয়াটাই স্বাভাবিক ব্যাপার

তোমাকে আমার জীবনের একটা ঘটনা বলি। আমার পছন্দের মানুষটাকে আর তার পরিবারের সবাইকে দেখে আমার বাবা যখন চিন্তায় পরে যায় সেখানে আমায় বিয়ে দিবে কি না তখন আমার এক ফুফাতো বড়ভাই বাবাকে বলেছিলো,
- "মামা, এই ছেলে আমার পছন্দ হয় নি। আমি বুঝতে পারছি না শ্রাবণী কি করে এমন একটা বেয়াদব ছেলেকে পছন্দ করলো।"

আমি অবাক হয়ে বলেছিলাম,
--ভাইয়া, তুই কাকে বেয়াদব ছেলে বলছিস? পিয়াস তোর সাথে কি এমন করেছে যে বেয়াদব হয়ে গেছে?

তখন আমার ফুফাতো ভাইটা বলেছিলো,
-" ছেলের চুলের কাটিং দেখেই বুঝা যায় ছেলেটা বেয়াদব। লম্বা চুল রেখেছে। তাছাড়া মেয়ে দেখতে এসেছে একটু ফরমাল শার্ট-প্যান্ট পরে আসবে তা না পরে এসেছে টিশার্ট আর কাটাছেঁড়া জিন্স। আরে পোশাক-আশাক দেখেও তো বুঝা যায় কে ভদ্র আর কে অভদ্র "

আমি তখন বলেছিলাম,
--দেখ ভাইয়া কারো চুলের স্টাইল আর জামা কাপড় দেখে চরিত্র বিবেচনা করতে যাস না । সব ফরমাল ড্রেস আর চুল ছোট করে রাখা ছেলে যেমন ভদ্র হয় না তেমনি সব কাটাছিড়া জিন্স পরা আর চুল লম্বা রাখা ছেলেরা অভদ্র হয় না। তাছাড়া তুই তো চুল ছোট রাখিস আর সবসময় ফরমাল ড্রেস পরিস তাহলে তোর বিরুদ্ধে কেন অফিসের মেয়ে কলিগেকে হ্যারাসমেন্টের অভিযোগ উঠেছিলো?"

এই কথা শুনে আমার ফুফাতো ভাই মাথা নিচু করে চলে গিয়েছিলো । কিন্তু তখন আমার ছোট চাচা বাবাকে বলেছিলো,
-"ভাই, আমার কাছেও ছেলেটাকে খুব একটা পছন্দ হয় নি। ছেলে বেসরকারি একটা ফার্মে জব করে। বেসরকারি চাকরির কোন গ্যারান্টি নেই। চাকরি এই আছে আবার এই নেই৷ আমি বলি কি তারচেয়ে বরং তুমি যে ছেলেটাকে আগে পছন্দ করেছিলে তারসাথেই নিজের মেয়ের বিয়ে দাও। ছেলেটা সরকারি জব করে আর বড় ঘরের ছেলে।"

আমি তখন শান্ত গলায় চাচাকে বলেছিলাম,
-"যেখানে রাতে ঘুমানোর পর সকালে ঘুম ভাঙবে কি না সেই গ্যারান্টি আমরা কেউ দিতে পারি না সেখানে চাকরির গ্যারান্টি কে দিবে?

এই কথা শুনে চাচা কিছুটা রেগে গিয়ে আমাকে বলেছিলো,
-" বড়রা কথা বলছে সেখানে তুমি কেন কথা বলছো? তোমার বাবা এখনো বেঁচে আছে। তোমার ভালো মন্দ তোমার বাবা দেখবে। তোমার সেখানে কথা বলতে হবে না"

আমিও তখন চাচার মুখের উপর বলে ফেলেছিলাম,
-" চাচা, কিছু মনে করবেন না, জীবনটা আমার তাই ভালোমন্দ সিদ্ধান্ত আমাকেই নিতে হবে। তাই দয়া করে আপনাদের সিদ্ধান্ত আমার উপর জোর করে চাপিয়ে দিবেন না "
এই বলে আমি আমার নিজের রুমে চলে গেলাম

রুমে বসে যখন একা একাই কাঁদছিলাম তখন মনে হলো কে যেন আমার মাথায় হাত রাখলো। মুখ তুলে তাকিয়ে দেখি বাবা। আমি চোখের কোণে জমে থাকা জলটা মুছে বাবাকে বললাম,
--কিছু বলবে বাবা?
বাবা তখন বলেছিলো,
-" তুই কেন ঐ ছেলেকে এতো ভালোবাসিস?"
আমি সেদিন বাবার চোখে চোখ রেখে বলেছিলাম,
-" কেন এতোটা ভালোবাসি জানি না বাবা। তবে আমি তোমার কাছে থাকলে যতটা নিরাপদ বোধ করি ঠিক ততটাই নিরাপদ বোধ করি পিয়াসের কাছে থাকলে"

আমার কথা শুনে বাবা হেসে বলেছিলো,
-" আমি রাজি মা। তোকে ঐ ছেলের সাথেই আমি বিয়ে দিবো"

শ্রাবণীর কথাগুলো মেয়েটা অবাক হয়ে শুনছিলো। শ্রাবণী তখন মেয়েটারকে বললো,
-- দুইজন দুইজনকে যদি সত্যিকারে ভালোবাসো। আর দুইজন দুইজনকে পাওয়ার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করো তাহলে দেখবে দিন শেষে তোমরা এক হবেই....
|
|

ট্রেন থেকে নেমে দেখি প্লাটফর্মের এক কোণে শ্রাবণী দাঁড়িয়ে আছে। আমি শ্রাবণীকে দেখে অবাক হয়ে ভাবতে লাগলাম, এই মেয়ে কি নায়িকা পূর্ণিমার লাইন ভার্সন নাকি। দিন যতো যাচ্ছে ততই সুন্দর হচ্ছে

আমি শ্রাবণীর কাছে যেতেই শ্রাবণী বললো,
-" আরো কাছে আসো"
আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে বললাম,
-- কি যে বলো না। এইখানে এইসব কিছু করা যাবে না। আগে বাসায় যায় তারপর
শ্রাবণী রাগে লাল হয়ে বললো,
-" কতোবার বলেছি সিগারেট খাবে না তারপরও আমার আড়ালে সিগারেট খাও? মুখ দিয়ে সমানে সিগারেটের গন্ধ বের হচ্ছে। বাসায় যায় আগে তারপর মজা দেখাচ্ছি".

আমি বুঝে গেছি আমার কপালে আজ দুঃখ আছে। সত্যি বলতে প্রেম করে বিয়ে করলে প্রতিটা পুরুষ হয়তো আমার মতো বউ দ্বারা নির্যাতনের স্বীকার হয়...
|
|
দুইমাস পর....

অর্পিতার ফোন পেয়ে খালিদের সারা শরীর কাঁপতে লাগলো। ভয়ে ভয়ে খালিদ ফোনটা রিসিভ করে হ্যালো বলতেই অপর প্রান্ত থেকে অর্পিতার স্বস্তির নিঃশ্বাস শুনতে পেলো। অর্পিতা অনেক কষ্টে কান্না চেপে রেখে খালিদকে বললো,
" বাবা মা আমাদের বিয়েতে রাজি হয়ে গেছে"

কথাটা শুনার পর খালিদ ফোনটা বুকের মাঝে চেপে ধরে আকাশে দিকে তাকিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলো..

আজ সারা শহর জুড়ে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। সেই বৃষ্টিতে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে অনবরত কান্না করছে অর্পিতা। আর বেলকনির সামনের রাস্তাটায় দাঁড়িয়ে আছে খালিদ

অর্পিতা দিকে তাকিয়ে খালিদ ভাবছে,
"প্রিয়, ভালোবাসা আজ কান্না হয়ে ঝড়ে পড়ুক তোমার ঠোঁটে"
খালিদের দিকে তাকিয়ে অর্পিতা ভাবছে,
"প্রিয়, ভালোবাসা আজ বৃষ্টি হয়ে ঝড়ে পড়ুক তোমার গায়ে"

সুখ এবং টাকা পয়সা দুটি ভিন্ন পথের পথিক

তোর বর কত স্টাইলিশ দোস্ত। হাজার হাজার মেয়েরা তাকে দেখলে ক্রাশ খাবে। ঠিক বলছিস অনেক স্টাইলিশ, হ্যান্ডসাম বর পেয়েছি। হাজার মেয়েরা ওর জন্য পাগল আর প্রচুর টাকার মালিক ও সে। আর আমার বরটা একদম স্টাইল বোঝে না। নিজের ইচ্ছা মতো চলবে কত বলি একটু স্মার্টলি চলাফেরা করতে শিখো কে শুনে কার কথা! আর সংসারের টানাপোড়েনের কথা নাই বা বললাম। বান্ধবী কাপড় গোছাতে গোছাতে আমার কথা শুনে একটা হাসি দিলো। তোর বর যেহেতু এতো স্মার্ট নিশ্চই তোকে অনেক সারপ্রাইজ দেয় মাঝে মাঝে! তোদের সংসারে তো সুখের অভাব নেই তাই না!! কি বলিস ওর এতো টাইম কোথায়! শুক্রবারে একটু ঘুরতে যাওয়ার সময় কই তার! কখনও নিজে থেকে কিছু একটা কিনে এনেছে আমার জন্য! ইনফ্যাক্ট আমার কি পছন্দ অপছন্দ কিছুই ও জানে না। কাজের চাপে কবে আমার বার্থডে সেটাও মনে থাকে না আর মনে থাকলেও একটা বড় কেক কিনে পাঠিয়ে দেয়। একা একাই কেক কাটি তবে খেতে ইচ্ছে করে না জানিস। কিন্তু আর যাই হোক ওর মেয়ে বান্ধবীর সাথে ঘুরতে যেতে কোনো প্রবলেম হয় না কখনও। বান্ধবীর কথা শুনে ওর দিকে আমার চোখ আটকে গেলো। কথা গুলো বলার সময় ওর চোখের কোনে পানি ছলছল করছিলো। আমি ওকে শান্তনা দিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে একটা রিকশা নিয়ে আমার বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। যেতে যেতে একটা জিনিস রিয়েলাইজ করলাম। নিজেকে এখন ভীষন ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে। আমাদের সংসারে প্রচুর টাকা না থাকলেও ইফতি কখনও আমার অযত্ন করে নি। অফিস থেকে ফেরার সময় প্রতিদিন আমার জন্য কিছু না কিছু নিয়ে এসেছে। হয়তো সেটা খুব দামি কিছু নয় কিন্ত তাতে অনেক ভালোবাসা আছে। প্রায়ই সময় পেলে আমাকে নিয়ে ঘুরতে যায়। রাস্তা পার হবার সময় শক্ত করে হাত ধরে রাখে। জন্মদিনে নিজের হাতে আমার জন্য কিছু একটা খাবার বানায়, আর গিফট হিসেবে একটা শাড়ি। অনেক দামি নয় কিন্তু সেই শাড়িতে ওর ভালোবাসা জড়িয়ে থাকে। অনেক স্টাইলিশ আর প্রচুর টাকা না থাকলেও ইফতি আর যাই করুক আমাকে রেখে অন্য কোনো মেয়ে নিয়ে ঘুরে বেড়ায় না। আসলেই টাকা মানুষকে প্রকৃতভাবে সুখী করতে পারে না। ইফতিকে নিয়ে আমার যেটুকু দুর্বলতা ছিলো আজ তা সব কেটে গেলো। রিকশা থেকে নেমে বাসায় ঢুকে ইফতির মুখটা দেখার পরে আমার শুধু একটা কথাই মনে হচ্ছিলো... You don't need a rich man,you need a man who can give you happiness. -
Zannatul Eva

Saturday, May 15, 2021

নিজেকে ভালো রাখতে চাও??

ধরুন, একটা রিলেশনে আছেন,বহুদিনের রিলেশন।আপনি মাঝে মাঝে ভালো থাকেন, মাযারাঝে মাঝে থাকেন না, রিলেশনটায়। কারণ, মাঝে মাঝে আপনাদের কথা কাটাকাটি হয়। কথা কাটাকাটি বাঝগড়া খুব সামান্য ম্যাটার এও হয়ে থাকে, সব সময় যে বড়সড় ব্যাপার থাকে তাওনা। ঝগড়ার পর সে "আসি" বলে বা না বলে চলে গেলো,তো আপনার খুবই কষ্ট হচ্ছে এইবার। রাত গভীর হয়,আপনার চোখে ঘুম নাই, রাতের সমানুপাতিক হারে কষ্ট বেড়ে যায় বুকের ভেতর, চোখের কোন বেয়ে ঝর্ণাধারা নেমে আসে প্রিয় মানুষটা আপনার পাশে নাই এখন তাই। আপনার মনে হচ্ছে এবার যে আপনি তো খুব একা! আপনার ফ্রেন্ডলিস্টে কম হলে ৪০০-৫০০ মানুষ চ্যাটলিস্টে এই রাতের বেলাও আছে। আরেএ! এইতো আপনার সবথেকে কাছের বন্ধুগুলোও আছে চ্যাটে এখন।কিন্তু,ওদের কে কি এতো কিছু বলা যায়! আপনি পিছিয়ে এলেন এবারো।

মনের ভেতরে কষ্ট পুষে আপনি বালিশটা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছেন অনেকক্ষন ধরে,এতক্ষন বুকে চাপা ব্যাথাটা কম থাকলেও এখন ব্যাথাটা আরো বেড়েছে। আপনি আপনাদের ঝগড়ার আগের চ্যাটগুলো পড়ছেন এখন, কি ভালো ভালো কথাই না হচ্ছিলো! হঠাৎ যে কি হলো,সব রাগের মাথায় চুরমার হয়ে গেলো। সে হয়তো সকালে আপনাকে ব্লক লিস্টে দিয়েও দিতে পারে ওঠে। আপনার নিজেকে হঠাৎ খুব একা লাগা শুরু হলো, ভীষণ একা। নিজের বুকের চাপা আর্তনাদ কাউকে বলতে পারলে নিজেকে খুব হালকা লাগতো বোধ হচ্ছে। একটা মানুষও কি নেই দুনিয়ায়,যাকে এই গভীর রাতেও মনের কথাগুলো, কষ্টগুলো বলে দেয়া যায় চোখ বুজে।

ওইতো পাশের রুমেই আম্মু আব্বু শুয়ে আছে! ওদের কে কি ডেকে তুলে নিজের এই অবর্ণনীয় একাকিত্ব কিংবা কষ্টের হাহাকারের কথা বলা যায়? মাকে বলতে পারলে মনে হয় খুব ভালো হতো তাইনা? মায়েরা যেমন নরম হয়, সময়ে সময়ে পাহাড়ের মতো অটলো হতে পারে? পাশের রুমে বাবার নাক ডাকার শব্দ শোনা যায়। আহা! কি আরামেই না বাবা ঘুমায়! এতো আরামের ঘুম কতোদিন না ঘুমিয়ে জাস্ট চ্যাটিং করে গেছি দিনের পর দিন! কতোই না শান্তিতে আছে ওরা এতগুলো বছর পরেও! এবার আপনি চোখ বুজে চিন্তা করছেন আপনার বাবা মা তো এমন না, বাহিরের এই মানুষটা যে আপনাকে রাগের মাথায় ফেলে চলে যায়, ওনারা কিন্তু তা কক্ষনো করেন নি। আপনার বড় বড় অসুখের সময়গুলোর কথা মনে পড়ে যায় এবার। এইতো গতো দুবছর আগেই না আপনি জন্ডিসে পড়লেন! আপনার মা সারাদিন সারারাত জেগে থাকতো,কান্না কাটি করতো মোনাজাত ধরে। আপনার বাবা সন্ধ্যের আগেই অফিস থেকে দৌড়ায়ে চলে আসতো, ব্যাগ ভর্তি ফল আর একটা মলিন হাসি মুখে নিয়ে! ছোট বোনটা বিছানার আসে পাশেই ঘুর ঘুর করে, যাতে তার ভাই একটু হেসে হলেও দু চার কথা বলে। একে একে সবই আপনার এবার মনে পড়ে যায়!

আপনার মনে পড়ে, নিজেকে নিয়ে আপনি আসলে ভালো নেই। কারণ নিজেকে ভালো আপনি কখনো বাসেননি, বেসেছেন! তবে সেটা জোর করে। অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে নিজের ভালোবাসাটা টা বরণ করে নিতে পারেন নি। আপনার দিন কেটে রাত পার হয়ে ভোর হয়েছে অন্য মানুষের মুখে একটা কৃত্রিম হাসি ফোটানোর জন্য। কই! নিজের মুখে তো একফোটা হাসির আনন্দ কখনো উপভোগ করেননি আপনি?নিজেকে কখনো নিজের ভালো কাজের জন্য ট্রিট দিয়েছিলেন? শেষ কবে একা ঘুরতে বেরিয়েছিলেন কানে হেডফোন গুজে দিয়ে পছন্দের গান ছেড়ে? কবে শেষ বৃষ্টি উপভোগ করেছিলেন? শেষ ভালো একটা বইয়ের কথাকি মনে পড়ে যেটা পড়ে আবেগে আপ্লুত হয়েছিলেন কিংবা বোকার মতো অট্টহাসি দিয়েছিলেন? শেষ মুভিটা কিংবা টিভি সিরিজটার কথাকি মনে আছে যেটার সিনগুলো এখনো চোখে ভাসে?

ছোটবেলার স্মৃতিগুলো কি মনে আছে? দাদা বাড়ি নানা বাড়ির কথা? ওরা এখন কোথায়? ছোট বেলায় ওদের করা আদরগুলোর দাম কি আপনি দিতে পারেছিলেন? আপনার মোনাজাতে কিংবা প্রার্থণায় কি ওরা থাকে এখনো? খেলনা পেলে কত্ত খুশি হতেন মনে আছে? ঈদ গুলো কতো আনন্দ দিতো? আপনার কি মনে পড়ে আপনি যখন এই পৃথিবীর আলো দেখতে পেলেন আপনার ফ্যামিলির মানুষগুলো আনন্দে চিৎকার করছিলো! নানী আপনাকে কোলে নিয়ে বলেছিলো, ওরে, তোরা শোন, আমার কোলে একটা চাঁদের টুকরা নাইম্মা আইসে!

আপনি চোখের কোনে অশ্রুবিন্দু নিয়ে বালিশটা শক্ত করে চেপে ধরে এসব কিছুই ভাবছিলেন। আপনার সব মনে পড়ে যায়, সব! ছোটবেলা, শৈশব, কৈশর সব! আপনার চোখের পানিগুলো এবার শোকাতে থাকে। নিজের ভেতরের দীর্ঘশ্বাস গুলো আস্তে আস্তে ছোট হতে হতে স্বাভাবিক হয়ে যায়। আপনি নতুন করে ঘোর অন্ধকারেও নিজের ভালোটুকু এবার স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছেন। মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে আপনার অপলক দৃষ্টিটা এখন আর নেই, চোখ আর মন শীতল হয়ে গেছে অনেকটাই। আপনি মোবাইলটাকে এবার অফ করে অনেকটা দূরে সরিয়ে শুয়ে পড়েছেন। একটা অবিশ্বাস্য ভালোলাগা কাজ করছে নিজের প্রতি, নিজেকে বলতে ইচ্ছে হচ্ছে আপনার খুব, আমি নিজেকে মূল্য দেই, নিজের আবেগগুলোকে যত্ন করি, নিজের খেয়াল রাখি,নিজেকে যথেষ্ট পরিমানে ভালোবাসি। আমি নিজেই নিজেকে ভালো রাখতে পারি।

আপনার চোখ এবার লেগে আসে ধীরে ধীরে, মস্তিষ্কে প্রবাহিত হয় শীতলতা। কিছুক্ষন পর আপনার রুম থেকেও শোনা যায় ঘন নাক ডেকে আরামে ঘুম দেবার একটা অতুলনীয় সিনারিও।

Dhaka - The city of Dreams

Introduction: Dhaka, the capital city of Bangladesh, has a rich and complex history. The city has been a center of political, economic, and...